মুসলিম উত্তরাধিকার আইন

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন

দেশ বিভাগের পর ১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন প্রবর্তনের ফলে এদেশের কৃষকরা পুনরায় জমির মালিকানা ফিরে পায়। ১৭৯৩ সালের পরবর্তী সময়ে দেশে বিভিন্ন স্বদেশী আন্দোলন ও কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে বিভিন্ন আইন করা হলেও ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা কৃষকদের ভূমির সীমিত অধিকার প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাশ হওয়ার ফলে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ হয় এবং কৃষকেরা পুনরায় জমির মালিকানা ফিরে পায় ।

উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি অর্জন –

কোন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির বন্টনযোগ্য অংশ মৃত ব্যক্তির ধর্মীয় ব্যক্তিগত আইন দ্বারা পরিচালিত হবে। আমাদের দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য “মুসলিম উত্তরাধিকার আইন” হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য “হিন্দু উত্তরাধিকার আইন” খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য “খ্রিস্টান উত্তরাধিকার আইন” দ্বারা উত্তরাধিকার নির্ধারিত হয়।

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন :

ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি এবং আত্মসমর্পণ। আল্লাহর ইচ্ছার উপর আত্মসমর্পণ ইসলাম এবং পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনই ইসলামের লক্ষ্য। আরবি আসসালামা শব্দ থেকে ইসলাম ও মুসলিম শব্দের উৎপত্তি। ইসলামের বাণীতে বিশ্বাসী ব্যক্তি মুসলমান।

মুসলিম আইনের উৎস্য মুসলিম আইনের উৎস হলোঃ

(ক) কোরআন : সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাজিলকৃত আল্লাহর বাণী বা ওহীর সমষ্টিই আল-কোরআন। আল-কোরআনে মোট ৬,৬৬৬ টি আয়াত এবং ১১৪টি সুরা আছে। সূরাসমূহ মক্কী ও মাদানী নামে দুই ভাগে বিভক্ত। মাদানী সূরাসমূহে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন-এর নির্দেশাবলি ও উপদেশ বর্ণিত মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের মূল উৎস্য হচ্ছে আল কোরআন।

(খ) সুন্নাহ্ : সুন্নাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে অনুসৃত পথ। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর মুখ নিঃসৃত বাণী অর্থাৎ, তাঁর কথা, কর্ম ও তাঁর সম্মুখে কৃত কোন কর্মের মৌন সম্মতিই হচ্ছে সুন্নাহ। সুন্নাহসমূহের পরিভাষাগত অর্থ হচ্ছে হাদিস। আরবিতে পূর্ব বর্ণিততিনটি বিষয়কে হাদিস কওলী, ফেনী ও তাকরীরি বলা হয়। রাসুল (সাঃ)-এর তিরোধানের পর হাদিস সংকলন করা হয়। বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থের সংখ্যা ৬ টি—বুখারী শরিফ, মুসলিম শরিফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজা শরীফ, নাসায়ী শরিফ ও আবু দাউদ শরীফ। তাদেরকে একত্রে সিয়া সিত্তাহ বলা হয় ।

(গ) ইজমা : ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিকগণ কোন সময়ে কোন বিষয়ে একমত পোষণ করলে বা একমত হয়ে কোন সমস্যা সমাধানে উপনীত হলে তাকে ইজমা বলে। অর্থাৎ কোন বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের পর কোন সমস্যা সমাধানে ইজমার সাহায্য গ্রহণ করা যায় ।

(ঘ) কিয়াস : কিয়াস অর্থ হচ্ছে আংশিক একমত হওয়া বা যুক্তিসংগত অনুমান করা। কোরআন, হাদিস, ইজমার পর কোন সমস্যার সমাধানে কিয়াসের সাহায্য গ্রহণ করা হয়।

বন্টনযোগ্য সম্পত্তিঃ

কোন মুসলমানের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে (ক) দাফন-কাফন ও মৃত্যুশয্যাকালীন খরচ (খ) মৃত্যুর তিন মাস পূর্ব পর্যন্ত সময়ের সেবা-শুশ্রূষার খরচ (গ) ঋণ এবং (ঘ) উইল বা উইলের খরচ (ঙ) প্রবেট বা সাকসেশন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত ব্যয় পরিশোধের পর যে সম্পদ থাকে তা মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশগণের মধ্যে বন্টিত হবে।

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ :

মুসলিম আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ বা উত্তারাধিকার তিন শ্রেণীতে বিভক্তঃ

ক) শেয়ার বা অংশীদার (যাবিল ফুরুজ) : কোরআনে যাদের অধিকার নির্ধারিত করে দেওয়া আছে, যেমন—কন্যা, মা, বাবা, দাদা, দাদী, স্বামী/স্ত্রী ইত্যাদি।

অংশীদার কে কেঃ

১২ জন অংশীদার রয়েছে তারা হচ্ছেঃ ১. পিতা, ২. স্বামী, ৩. স্ত্রী, ৪. মাতা, ৫. কন্যা, ৬. দাদা, ৭. দাদী, ৮. ছেলের কন্যা, ৯. বৈপিত্রের ভাই, ১০. বৈপিত্রের বোন, ১১. বোন, ১২. বৈমাত্রের বোন। এদের মধ্যে প্রথম ৫ জন সকল সময়ই সম্পত্তি পাবে, তারা প্রাথমিক উত্তরাধিকারী, পরবর্ত তিনজন (৬-৮) পূর্ববর্তী ৫ জনের বিকল্প। সর্বশেষ চারজন (৯-১২) সন্তান ও পিতা থাকলে সম্পত্তি পাবে না (অংশীদারদের তালিকায়)। প্রথম একজনের সম্পত্তি পাবার বিষয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। ইসলামী চিন্তাবিগণ কোরআন ও হাদিস পর্যলোচনাপূর্বক ফিকাস নীতি অনুসরণ করে তাদের তিনজনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন ।

image

খ) রেসিডুয়ারী বা পরিত্যক্ত অংশভোগী (আসাবা) : যারা নির্ধারিত কোন অংশ | সকল সময় পায় না, অংশীদারদের নির্ধারিত অংশ দেওয়ার পর বাকি সম্পত্তি রেসিডুয়ারিগণ পেয়ে থাকে। যেমন— পুত্র, ভাই, চাচাত ভাই, ভাইয়ের পুত্র ইত্যাদি ।

রেসিডুয়ারী কারাঃ 

ক) সকল রেসিডুয়ারী মৃতের সাথে পুরুষ আত্মীয়ের মাধ্যমে সম্পর্কযুক্ত। রেসিডুয়ারিগণকে তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা –

১. নিজের অধিকার (রেসিডুয়ারী তালিকাভুক্ত সকলে )

২. অন্যের কারণে – (৪ জন মহিলা অন্যের বর্তমানে রেসিডুয়ারী হিসাবে সম্পত্তি পায়; পুত্রের বর্তমানে কন্যা, পুত্রের পুত্র-এর বর্তমানে পুত্রের কন্যা, ভাইয়ের বর্তমানে বোন, বৈমাত্রেয় ভাইয়ের বর্তমানে বৈমাত্রেয় বোন)

৩. অন্যের সাথে– যখন মৃতের বোন এবং বৈমাত্রেয় বোন, মৃতের কন্যা এবংপুত্রের কন্যার সাথে বর্তমান থাকে।

খ) উত্তরাধিকারের ক্রমানুসারে রেসিডুয়ারিগণকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন—১. বংশধর, ২. মৃতের ঊর্ধ্ববর্তী বংশধর, ৩. মৃতের পিতার নিম্নবর্তী

গ) ৬ জন অংশীদার ক্ষেত্রবিশেষে রেসিডুয়ারী হিসাবে অংশ পেয়ে থাকেন। তারা হচ্ছেন—পিতা, দাদা, কন্যা, পুত্রের কন্যা, বোন, বৈমাত্রেয় বোন। পিতা ও দাদা কোন কোন সময় অংশীদার ও রেসিডয়ারী উভয় অধিকারে সম্পত্তি পেয়ে থাকে।

image

গ) দূর সম্পর্কের আত্মীয় (যাবিল আরহাম)ঃ যদি কোন অংশীদার বা রেসিডুয়ারী না থাকে তবে দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি পাবে। অংশীদার বা পরিত্যক্ত অংশভোগী নয় অথচ রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়, যেমন—ভাগ্নি, ভাতিজি, চাচাত বোন ইত্যাদি দূর সম্পর্কের আত্মীয়। দূর সম্পর্কের আত্মীয়রা নিম্নরূপ, যথা—image

Scroll to Top